শামসুল মিয়ার বয়স প্রায় ৮০ বছর। মুন্সিগঞ্জের পদ্মাপারের মাওয়া চৌরাস্তা থেকে বাঁ দিকের সড়ক ধরে কুমারভোগের দিকে একটু এগোলেই তাঁর পৈতৃক বসতভিটা। এখানেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শামসুল মিয়ার বাড়ির সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বয়সের কারণে চোখে কিছুটা কম দেখেন তিনি। চা খেতে খেতে আলাপ জমে উঠল আমাদের। প্রশ্ন করলাম, ‘এই জীবনে কখনো ভেবেছিলেন পদ্মা নদীতে সেতু হবে?’ একটু জোরের সঙ্গেই জবাব দিলেন, ‘পদ্মার ওপর সেতু হবে, এটা কল্পনার বাইরে ছিল।’
এভাবেই পদ্মা সেতু শামসুল মিয়ার কল্পনাকে হার মানিয়েছে। তাঁর মতো ওই অঞ্চলের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে পদ্মা সেতু যেন অবিশ্বাস্য স্বপ্নের নাম।
অন্যদিকে তরুণদের কাছে পদ্মা সেতু নিজের স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নাম। দুপুরে কথা হলো দক্ষিণ মেদিনীমণ্ডলের তুহিন মোল্লার সঙ্গে। ২৩ বছর বয়সী তুহিন মোল্লা পেশায় স্যানিটারি মিস্ত্রি। তাঁর গল্পটা একটু ভিন্ন। ১০ বছর আগে যখন পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়নি, তখন বাবার সঙ্গে পদ্মায় মাছ ধরতে যেতেন কিশোর তুহিন। সেতুর কাজ শুরুর পর বাপ-দাদার পেশায় থাকেননি। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে মাওয়া অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। দালানকোঠা উঠতে থাকে। তাই স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ শেখেন। এখন রোজগারও বেশ ভালো।
তুহিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতু চালু হলে ওপারের শিবচর, ভাঙা এলাকায় দালানকোঠা বানানো বাড়বে।’ তখন সেখানেও কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তুহিন মোল্লা।
এভাবে পদ্মাপারের সন্তানদের আশা দেখাচ্ছে সেতু। পদ্মা সেতু বদলে দিচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন। জীবনে লাগছে আধুনিকতার ছোঁয়া।