আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস। এগিয়েছে অনেক, আছে হতাশাও

দেশে ডিজিটাল ব্যবস্থা জীবন সহজ করেছে। যেমন বাসের টিকিট কাটতে মানুষকে এখন আর বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয় না। স্মার্টফোনেই টিকিট কেটে ফেলা যায়। টিকিটের দামও পরিশোধ করা যায় মুঠোফোনে। আজ থেকে ১৩ বছর আগে যা কল্পনাও করা যেত না।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: রূপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করেছিল। এ বছর ছিল লক্ষ্যপূরণের।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’–এর এটা বড় অগ্রগতি। কিন্তু কিছু হতাশার দিকও আছে। যেমন বাংলাদেশ স্মার্টফোন ব্যবহারের দিক দিয়ে প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির ১৩তম সভার কার্যপত্র বলছে, বাংলাদেশে মাত্র ৩৫ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা তো এগিয়ে আছেই, এমনকি নেপালেও স্মার্টফোন ব্যবহারে হার ৫৩ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ‘রূপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করেছিল, তার লক্ষ্যপূরণের চিত্রটি মিশ্র। একটি দিক হলো মুঠোফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার ইত্যাদি ডিজিটাল সরঞ্জাম ও ব্যবস্থার ব্যবহার অনেক বেড়েছে এবং তা সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকারি অনেক সেবা ও সেবার তথ্যাদি এখন অনলাইনেই পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা বেড়েছে। বিপরীত দিকটি হলো বহু মানুষ ও বহু সেবা এখনো ডিজিটাল ব্যবস্থার বাইরে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা ব্যবহার করে দুর্নীতি কমানো, সুশাসনকে এগিয়ে নেওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এখন ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবহার করে অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া ও সুশাসন নিশ্চিতের সময়।

আমরা তুলনা করব ২০০৮ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ২০২১ সালের বাংলাদেশের। ২০০৮ সালে যেখানে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা ছিল না, প্রযুক্তিভিত্তিক কোনো শিল্প ছিল না। সেখানে ৯০ শতাংশ সরকারি সেবা এখন অনলাইনে।
জুনাইদ আহ্‌মেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
এমনই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আজ ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস পালন করবে। ২০০৮ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: রূপকল্প-২০২১’ ঘোষণা করে। এ বছরটি তাই ছিল লক্ষ্যপূরণের বছর।

রূপকল্পের লক্ষ্য কতটুকু পূরণ হলো জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালে যে রূপকল্প প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন, তা এখন বাস্তব। অঙ্গীকারের চেয়ে অর্জন বেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা তুলনা করব ২০০৮ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ২০২১ সালের বাংলাদেশের। ২০০৮ সালে যেখানে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা ছিল না, প্রযুক্তিভিত্তিক কোনো শিল্প ছিল না। সেখানে ৯০ শতাংশ সরকারি সেবা এখন অনলাইনে।’

কোথায় এগিয়ে, কোথায় পিছিয়ে
ডিজিটাল ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশের অবস্থান বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে তুলে ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ১১টি মাপকাঠি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোবাইল ইন্টারনেটের দামে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স (এনআরআই), সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল রাইজার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিটাল কম্পিটিটিভনেসের ডিজিটাল রাইজার প্রতিবেদন ২০২১ অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে যাওয়া দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়। এ তালিকায় এক নম্বরে শ্রীলঙ্কা।

ডিজিটালের ক্ষেত্রে এ দেশ পিছিয়ে আছে জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট জরিপ, মোবাইল ইন্টারনেটের গতি, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম, স্মার্টফোন ব্যবহার, ডিজিটাল জীবনমান ও বৈশ্বিক স্টার্টআপ র‌্যাঙ্কিংয়ে। জাতিসংঘের ২০২০ সালের ই-গভর্নমেন্ট জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯তম। জরিপে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, ভুটান ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো।

সার্ফশার্কের ‘ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স ২০২১’ বলছে, এ সূচকে বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৩তম। দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাংলাদেশ সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। এ সূচকে ইন্টারনেট সামর্থ্য ও মান, ই-অবকাঠামো, ই-নিরাপত্তা ও ই-সরকারের মতো বিষয়গুলো দেখা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করা প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে চিন্তা করার আগে তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।

করোনাকালে তথ্যপ্রযুক্তি
করোনাকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা হয়েছে অনলাইনে। ব্যবসা-বাণিজ্য সচল থেকেছে ইন্টারনেট ও হোম অফিসের (বাসায় থেকে কাজ) মাধ্যমে। টিকাদান ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে ওয়েবসাইট খুলে। ২০০৮ সালের অবস্থায় থাকলে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। কিন্তু এখানেও বৈষম্য। গ্রামের ও দরিদ্র পরিবারের শিশুরা করোনাকালে ক্লাস করতে পারেনি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সবকিছু হয়ে যায়নি। এখনো অনেক কিছু করতে হবে। প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা গড়া, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, শক্তিশালী অবকাঠামো দাঁড় করানোর মতো কাজগুলো জরুরি।

Facebook
Twitter
LinkedIn

আরো খবর

ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা সজাগ আছি: প্রধান উপদেষ্টা

ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা এখনো সজাগ আছি, ঐক্যবদ্ধ আছি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত যে

বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, বলছেন ফেরত যাওয়া ভারতীয় ট্রাকচালকরা

বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত ভারত। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিসহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলার প্রতিবাদে লাগাতার বিক্ষোভ, অবরোধ,

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১০০, ধ্বংসস্তূপে আটকা বহু মানুষ

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় শনিবার (৩০ নভেম্বর) আরও অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে চালানো হামলাতেই ৪০ জন

সরকারি কর্মচারীদের শুধু নিজের সুবিধা বৃদ্ধির কথা ভাবলে চলবে না

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুধু নিজেদের অধিকার আদায় বা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা ভাবলে চলবে না। সাধারণ মানুষের সার্বিক কল্যাণে আত্মনিবেদিত হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি এবং